ডেস্ক নিউজ:
কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, মোবাইল এখন অনেকটা আমাদের প্রয়োজনীয় বস্তুর মতো। তাই বড়দের মতো শিশুরাও মোবাইল ব্যবহার করবে এবং এর ভালো দিকগুলো জানবে, এটা আমাদের কাম্য। তাই বলে মোবাইলে কেবল গেম খেলে শিশু সময় নষ্ট করবে এটা মোটেও ভালো দিক নয়।
আর চিকিৎসকদের মতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে গেম খেলা বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকা শিশুর মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির কারণ
প্রযুক্তির অন্যতম অনুষঙ্গ মোবাইল। এ মোবাইলের কল্যাণে আমরা এগোচ্ছি প্রতিনিয়ত।
এর কল্যাণে আমাদের জীবনযাপনও অনেক সহজ হয়েছে। তবে মোবাইলের কিছু ক্ষতির দিকও ইদানীং উন্মোচিত হচ্ছে বড় আকারে। আর তার অন্যতম একটি- শিশুদের মোবাইলের প্রতি আসক্তি। অবশ্য এর একাধিক কারণও আছে।
এর মধ্যে অন্যতম সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের সময় না দেয়া। বাবা-মা ব্যস্ত থাকেন চাকরি বা ব্যবসার কাজে। অন্যদিকে সন্তান লেখাপড়ার বাইরে বাড়িতে সময় কাটায় একা একা।
সে জন্য সন্তানকে দেয়া হয় মোবাইল কিংবা কম্পিউটার, যাতে নানা ফাংশন, গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর এ ব্যস্ত থাকা থেকেই শুরু হয় আসক্তি। এ ছাড়া ইন্টারনেটের কল্যাণে মোবাইলে শিশুরা হাতের মুঠোয় পেয়ে যায় নানা বিষয়। যার মধ্যে অনেক নিষিদ্ধ বিষয়ও লুকিয়ে থাকে।
মোবাইলে শিশুরা আসক্তির আরও অনেক কারণ আছে। কিছু বাবা-মা তার চঞ্চল শিশুকে নিয়ন্ত্রণ করতে মোবাইল দিয়ে বসিয়ে দেন। ফলে সেই শিশু পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গল্পগুজব করা, প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়া, সবার সঙ্গে মিশতে পারার দক্ষতা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাঈদা আনোয়ার পপি বলেন, মোবাইলে প্রতি আসক্তি শিশুদের সামাজিক দক্ষতা নষ্ট করছে। ফলে তৈরি হয় শিশুদের নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। এ ছাড়া প্রযুক্তির এ আসক্তি শিশুদের জীবনে বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবও ফেলছে।
অন্যদিকে দীর্ঘসময় মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রাখার ফলে শিশুর চোখের সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। আবার দীর্ঘসময় বসে থাকতে শিশুর স্থূলতাও বেড়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে শিশুর চিন্তা বা কল্পনাশক্তিও। এ ছাড়া সব ধরনের গ্যাজেটের ওপরই শিশুদের অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা খারাপ। তাই শিশুকে খুব বেশি সময় কোনো গ্যাজেট ব্যবহার করতে দেয়াও ঠিক নয়।
ধানমণ্ডির বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বলেন, নগরের সব এলাকায় খেলাধুলার মাঠ নেই, অনেক বিদ্যালয়েও খেলার মাঠ নেই। নাগরিক ব্যস্ততায় আমরাও শিশুদের ঠিকমতো সময় দিতে পারছি না। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই ঘরের মধ্যে বন্দি শিশুরা কম্পিউটারের প্রতি আসক্তি হয়ে পড়ছে।
প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটের ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ) ইলিয়াস আহমেদ বলেন, সব বাবা-মায়ের উচিত বিদ্যালয়ের পাশাপাশি সন্তানকে নানা ধরনের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত রাখা। তবেই শিশুর সুকুমার বৃদ্ধি পাবে আপন গতিতে।
কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, মোবাইল এখন অনেকটা আমাদের প্রয়োজনীয় বস্তুর মতো।
তাই বড়দের মতো শিশুরাও মোবাইল ব্যবহার করবে এবং এর ভালো দিকগুলো জানবে, এটা আমাদের কাম্য। তাই বলে মোবাইলে কেবল গেম খেলে শিশু সময় নষ্ট করবে এটা মোটেও ভালো দিক নয়।
আর চিকিৎসকদের মতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে গেম খেলা বা কম্পিউটার নিয়ে ব্যস্ত থাকা শিশুর মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির কারণ। আর এ জন্য বাবা-মাকেই এগিয়ে আসতে হবে।
ব্যস্ততা বা কাজের দোহাই দিয়ে সন্তানকে সময় না দেয়াটা বন্ধ করতে হবে। সন্তানকে সৃজনশীল বই পড়াতে হবে, তাদের নিয়ে বেড়াতে যেতে হবে, তাদের খেলাধুলায় আগ্রহী করতে হবে, তাদের প্রকৃতি দেখাতে হবে- মূল কথা তাদের স্বপ্ন দেখাতে হবে। ফলে শিশু বড় হবে কোনো ধরনের খারাপ আসক্তি ছাড়াই।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।